গ্রামের অন্ধকারে হঠাৎ ভেসে ওঠে এক ঝলকানি আলো! কেউ বলে ভূতের প্রেতচারণ, কেউ বলে প্রকৃতির রহস্য। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় ভুতের আলো নামে পরিচিত এই অদ্ভুত ঘটনা শতাব্দী ধরে মানুষের মনে কৌতূহল ও ভয়ের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু এটা কি সত্যিই অশরীরী আত্মার উপস্থিতি, নাকি এর পিছনে লুকিয়ে আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা?
কিংবদন্তির আড়ালে ভুতের আলো
স্থানীয়দের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ানো গল্প অনুযায়ী, এই আলো দেখা যায় মূলত জলাভূমি, পতিত জমি বা কবরস্থানের কাছে। অনেকের বিশ্বাস, এগুলো নাকি অসময়ে মারা যাওয়া আত্মাদের অপূর্ণ ইচ্ছার প্রকাশ। সুন্দরবনের কিছু গ্রামে লোককথা রয়েছে—যে আলো নাকি ভাটার সময় জলের ওপর নাচতে থাকে, আর তা দেখলেই বিপদ ডেকে আনে!
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি: প্রকৃতির খেলা
বিজ্ঞানীরা কিন্তু ভুতের আলো এর পিছনে ভিন্ন কারণ খুঁজে পেয়েছেন। তাদের মতে, এটি হতে পারে মিথেন গ্যাস বা জোনাকি পোকার সমাবেশ। জলাভূমিতে পচনশীল পদার্থ থেকে উৎপন্ন মিথেন বাতাসের সংস্পর্শে এলে জ্বলে উঠতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে, ফসফরাসযুক্ত মাটি বা নির্দিষ্ট উদ্ভিদের রাসায়নিক বিক্রিয়াও আলোর সৃষ্টি করে।
সুন্দরবনের আলোর রহস্য
সুন্দরবনের কিছু দ্বীপে রাতের বেলা নদীর পাড়ে হঠাৎ আলোর ঝিলিক দেখা যায়। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা একে ‘চন্দনবাড়ির আলো’ নামে ডাকে। গবেষকদের ধারণা, এখানে জলের নিচে থাকা গ্যাস বা জীবাণুর আলোক বিকিরণই এর কারণ।
অন্যান্য রহস্যময় স্থান
- বীরভূমের ভুতের বাতি: কেউ কেউ দাবি করেন, পুরনো রাজবাড়ির ধ্বংসস্তূপে আলো ঘুরে বেড়ায়।
- মালদার আলোর মিছিল: স্থানীয়রা বলেন, রাতে দল বেঁধে আলো নাচতে দেখা যায়, যা হারিয়ে যায় গভীর জঙ্গলে।
সংস্কৃতি ও বিশ্বাসে ভুতের আলো
এই আলো শুধু রহস্যই নয়, স্থানীয় সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। অনেক গল্প, নাটক ও চলচ্চিত্রে ভুতের আলো কে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের লোকগাথায় এগুলো ‘প্রেতাত্মার বার্তা’ বা ‘ভাগ্যের ইঙ্গিত’ হিসেবেও বিবেচিত হয়।
উপসংহার: রহস্য এখনো অমিমাংসিত
বিজ্ঞান যতই ব্যাখ্যা দিক না কেন, ভুতের আলো এর মোহনীয়তা এখনো অটুট। এটি প্রকৃতির অপার রহস্য নাকি অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রকাশ—তা হয়তো চিরকালই রহস্য থেকে যাবে। কিন্তু এটুকু নিশ্চিত, পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে এই আলো মানুষের কল্পনাকে জাগিয়ে রাখবে আরও বহু বছর!